লালমনিরহাটে হালকা শীতের মৃদু বাতাসে যেন দুলছে চাষীদের স্বপ্ন থোকা থোকা শিম। ছোট্ট ছোট্ট ফুল আর থোকায় থোকায় শিমে ভরে উঠেছে দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট জেলার সবজি চাষীদের শিম বাগান। বর্তমানে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে শিমের। শীতকালীন সবজি হিসেবে শিমের কদর বেশি। হাট-বাজারে আগাম শিমের চাহিদা প্রচুর হওয়ায় মুনাফাও বেশি পাচ্ছে চাষীরা।
বছর জুড়েই লালমনিরহাটের অধিকাংশ কৃষি জমিতে রকমারি সবজি চাষ হয়। এ জেলার উঁচু জমিতে চাষীরা শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইতিমধ্যে বিক্রিও শুরু হয়েছে সবজির।
১২ মাসই তারা চাষ করেন নানা রকমারি সবজি। আর বর্তমানে তারই ধারাবাহিকতায় শীতের শুরুতেই ভোক্তাদের চাহিদা পূরণে আগাম জাতের সবজি চাষ করেছেন অনেকে। এ শীত শুরুতেই বিভিন্ন জাতের সবজিতে ভরে উঠেছে হাট-বাজারগুলো।
লালমনিরহাট জেলার সবজি স্থানীয় হাট-বাজারের চাহিদা পূরণ করে প্রতিদিন ওই সব গ্রাম থেকে হাজার হাজার মন সবজি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন বড় বড় পাইকারি বাজারে চলে যায় লালমনিরহাটের উৎপাদিত সবজি। এসব গ্রামের চাষিরা সবজি চাষে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছেন। তন্মধ্যে শীতকালীন সবজির অন্যতম হচ্ছে শিম।
আর স্বল্প খরচে বেশি মুনাফা পেতে শিম চাষে ঝুঁকে পড়েছেন লালমনিরহাটের চাষিরা। শীতের শুরুতেই আগাম শিমের কদর বেড়েছে হাট-বাজারে। ফলে দাম বেশি থাকায় ভালো মুনাফা গুণছেন চাষিরা। বর্তমানে চাষিদের ক্ষেতেই প্রতি কেজি শিম ১২০/১৩০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। পাইকাররা চাষীদের ক্ষেত থেকে নগদ অর্থে শিম কিনে লালমনিরহাট জেলার হাট-বাজারসহ সারা দেশের পাইকারী বাজারে পাঠাচ্ছেন। শীতকালীন মৌসুমে সবজি উৎপাদনকে ঘিরে নানামুখি ব্যবসা চালু হয় এ জেলায়। সেই বেড়ে গেছে দিন মজুরের মজুরি, অটো-ভ্যানসহ ছোট যানবাহনগুলো চাহিদাও বেড়ে যায়। সব মিলে সবজিকে ঘিরে এ জেলার অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে ওঠেছে।
লালমনিরহাটের সবজি খ্যাত গ্রাম এর মধ্যে রয়েছে- শিয়ালখাওয়া, চাঁপারহাট, ভোটমারী, দৈখাওয়া, সিঙ্গিমারী, কুমড়িরহাট, চন্দনপাট, বড়কমলাবাড়ী, হাজীগঞ্জ, চণ্ডীমারি, কর্ণপুর, দুড়াকুটি, ফুলগাছ, কোদালখাতা, ভাটিবাড়ী, কাকেয়া টেপা, বনগ্রাম, শিবেরকুটি অন্যতম।
এসব সবজি রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফেনী, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে। জেলার আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের কুমড়িরহাট ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ীহাটের মাঠে ও গোশালা বাজারে প্রতিদিন সকালে বিশাল পাইকারি বাজার বসে।
শিম চাষীরা বলেন, অল্প জমি, স্বল্প পুজি ও একটু পরিচর্যা করলে উচু জমিতে শিম চাষ করে বেশ মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। আষাঢ় মাসের শেষ দিকে সারি বদ্ধ ভাবে গর্ত খুড়ে কিছু গোবর সার প্রয়োগ করে শিমের বীজ বপন করতে হয়। এরপর কিছু পরিচর্যা সার সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগ করে চারা গাছ বড় হলে একটু মাচাং বানিয়ে দিলে মাত্র আড়াই/ তিন মাসে শিম বাজারে পাঠানো সম্বব বলে দাবি চাষিদের।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম খন্দকার বলেন, শিম প্রোটিন সমৃদ্ধ সবজি। এর বিচিও সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। তাই দেশে এর চাহিদা ব্যাপক। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে।